পালযুগের শিল্পরীতিকে প্রাচ্য শিল্পরীতি বলা হয়। এই রীতির পূর্বসূরী ছিল গুপ্তযুগের শিল্পকলা। পাল আমলের স্থাপত্যের মধ্যে ছিল স্তূপ, বিহার এবং মন্দির। তবে প্রকৃতির কোপে এবং মানুষের রোষে সেই স্থাপত্যের আর বিশেষ কিছু নেই।
প্রাচীন ভারতে বৌদ্ধ এবং জৈনদের মধ্যে স্তূপ নির্মাণের রীতি ছিল। বিশেষ করে বৌদ্ধরা বহু স্তূপ তৈরি করেছিল। এগুলি প্রথমে দেখতে ছিল গোলাকার, পরে অনেকটা মোচার খোলার মতো শঙ্কু আকৃতির হয়ে পড়ে।
পাল রাজত্বে তৈরি স্তূপগুলো শিখরের মতো দেখতে ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের ঢাকা জেলার আসরফপুর গ্রামে, রাজশাহীর পাহাড়পুরে, চট্টগ্রামে, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় ভরতপুর গ্রামে বৌদ্ধ স্তূপ পাওয়া গেছে। তবে স্তূপ নির্মাণে বাংলায় কোনো মৌলিক ভাবনার বিকাশ লক্ষ করা যায়নি। বিহারগুলি ছিল বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বাসস্থান এবং বৌদ্ধ জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। পাহাড়পুরে সোমপুরী বিহার ছিল পাল আমলের উল্লেখযোগ্য বিহার। মন্দিরের মধ্যে সোমপুরী বিহারের মন্দির ছিল উল্লেখযোগ্য বিহার। চারকোণা এই মন্দিরে গর্ভগৃহ, প্রদক্ষিণ পথ, মণ্ডপ, সুউচ্চ স্তম্ভ ইত্যাদি ছিল। মন্দির নির্মাণে স্থানীয় পোড়ামাটির ইট এবং কাদার গাঁথুনি ব্যবহার করা হয়েছিল।
পাল আমলের ভাস্কর্যগুলি ঐ আমলের শিল্পের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ। পাহাড়পুর প্রত্নক্ষেত্রে এর সবচেয়ে ভালো নির্দশন পাওয়া যায়। এখানে মূল মন্দিরের গায়ে পাথরের ফলক রয়েছে যার মধ্যে স্থানীয় রীতির প্রভাব স্পষ্ট। ফলকগুলিতে রাধা-কৃষ্ণ, যমুনা, বলরাম, শিব, বুদ্ধ অবলোকিতেশ্বরের মূর্তি আছে। এই দেব-দেবীদের মধ্যে ব্রাহ্মণ্য ঐতিহ্যের প্রভাব অনেক বেশি। পাল রাজারা নিজেরা বৌদ্ধ হলেও বৌদ্ধ এবং ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি উভয়ের পৃষ্ঠপোষণা করতেন। ভাস্কর্যের মধ্যে পোড়ামাটির শিল্পসামগ্রীও ছিল। এগুলি ছিল স্থানীয় লোকায়ত শিল্পের প্রতীক। এগুলিতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ, সমাজজীবন, ধর্মবিশ্বাস ইত্যাদি ফুটে উঠেছে।
খ্রিস্টীয় একাদশ-দ্বাদশ শতকের আগে আঁকা কোনো ছবি আজ আর পাওয়া যায় না। যে ছবিগুলি পাওয়া গেছে সেগুলো বৌদ্ধধর্মের পান্ডুলিপি অলংকরণ করার জন্য আঁকা হয়েছিল। এই ছবিগুলি আকারে ছোটো কিন্তু এগুলি পরের যুগের অণুচিত্রের (মিনিয়েচার) মতো সুক্ষ্ম রেখাময় নয়। বরং এগুলির সঙ্গে প্রাচীরগাত্রে আঁকা ছবির মিল আছে।
পাল যুগে খ্রিস্টীয় অষ্টম-নবম শতকে বরেন্দ্রভূমির ধীমান এবং তাঁর ছেলে বীটপাল ছিলেন প্রসিদ্ধ শিল্পী। তাঁরা ধাতব শিল্পে, ভাস্কর্য এবং চিত্রশিল্পে বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন।