নালন্দা বৌদ্ধবিহার
সম্ভবত গুপ্ত সম্রাটদের আমলে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে আজকের বিহার রাজ্যে নালন্দা বৌদ্ধবিহার তৈরি হয়েছিল। কালে কালে সমগ্র এশিয়ায় নালন্দার শিক্ষা-দীক্ষার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। হর্ষবর্ধন এবং পাল রাজাদের আমলে নালন্দা শাসকদের সাহায্য পেয়েছিল। স্থানীয় রাজা এবং জমির মালিকরা তো বটেই, এমনকী সুদূর সুমাত্রা দ্বীপের শাসকও এই মহাবিহারের জন্য সম্পদ দান করেছেন। তা থেকে ছাত্রদের বিনা পয়সায় খাবার, জামাকাপড়, শয্যাদ্রব্য এবং ওষুধপত্র দেওয়া হতো। সুদূর তিব্বত, চিন, কোরিয়া এবং মোঙ্গলিয়া থেকে ছাত্ররা এখানে আসত পড়াশোনার জন্য। তার মধ্যে চিনদেশের ছাত্রদের শিক্ষাদানের জন্য বিশেষ তহবিলের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। হিউয়েন সাঙ খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে এই বিহারে শিক্ষালাভ করেছেন। কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ছাত্ররা এখানে পড়ার সুযোগ পেত। নালন্দার সমৃদ্ধির যুগে দশ হাজার জন আবাসিক ভিক্ষু এখানে থাকত। তার মধ্যে ১,৫০০ জন ছিল শিক্ষক এবং ৮,৫০০ জন ছিল ছাত্র। ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত এর খ্যাতি বজায় ছিল। ঐ শতকে তুর্কি অভিযানকারীরা বিহার অঞ্চল আক্রমণ করে এই মহাবিহারের ব্যাপক ক্ষতি করেছিল।
বিক্রমশীল মহাবিহার
পাল সম্রাট ধর্মপাল খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে মগধের উত্তর ভাগে গঙ্গার তীরে আধুনিক ভাগলপুর শহরের কাছে বিক্রমশীল মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তী পাঁচশো বছর এটি টিকে ছিল। এই মহাবিহারে বৌদ্ধ ধর্মচর্চা এবং শিক্ষার জন্য একশোর বেশি আচার্য ছিলেন। সেখানে পড়াশোনার জন্য ছাত্ররা আসত। এখানে ব্যাকরণ, তর্কশাস্ত্র, দর্শন ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হতো। সর্বোচ্চ তিন হাজার ছাত্র এখানে পড়ত এবং বিনা খরচে তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল। এখানেও প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে ছাত্রদের ভর্তি হতে হতো। শিক্ষা শেষে তাদের উপাধি প্রদান করা হতো। বিক্রমশীল ছিল বজ্রযান বৌদ্ধ মতচর্চার একটা বড়ো কেন্দ্র। এর গ্রন্থাগারে
ছিল বহু মূল্যবান পান্ডুলিপি। দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান (অতীশ) ছিলেন এই মহাবিহারের অন্যতম একজন মহাচার্য। এই মহাবিহারকেও ত্রয়োদশ শতকে তুর্কি অভিযানকারীরা ধ্বংস করেছিল।