সেন যুগে সাহিত্য কিভাবে সমাজকে প্রতিফলিত করেছে তার বর্ননা দাও।

সেন যুগে লক্ষ্মণসেনের রাজসভার কবি জয়দেব সবচেয়ে বিখ্যাত। সাহিত্যিক। তাঁর গীতগোবিন্দম্ কাব্যের বিষয় ছিলো রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের কাহিনী। লক্ষ্মণসেনের রাজসভার আর এক কবি ধোয়ী লিখেছিলেন পবনদূত কাব্য। এ যুগের আরো তিনজন কবি ছিলেন গোবর্ধন, উমাপতিধর এবং শরণ। এই পাঁচজন কবি একসঙ্গে লক্ষ্মণসেনের রাজসভার পঞ্চরত্ব ছিলেন। ত্রয়োদশ শতকের গোড়ায় কবি শ্রীধর দাস কর্তৃক সংকলিত সদুক্তিকর্ণামৃত গ্রন্থে বিভিন্ন কবিদের লেখা কবিতা স্থান পেয়েছে।

সেন যুগের ব্রাহ্মণ্যধর্মী কঠোর অনুশাসনের সঙ্গে সাহিত্যেরও যোগ ছিল। রাজা বল্লালসেন এবং রাজা লক্ষ্মণসেন দুজনেই স্মৃতিশাস্ত্র লিখেছিলেন। বল্লালসেনের লেখা চারটে বইয়ের মধ্যে দানসাগর এবং অদ্ভুতসাগর বই দুটি পাওয়া গেছে। লক্ষ্মণসেনের মন্ত্রী হলায়ুধ বৈদিক নিয়ম বিষয়ে ব্রাধাণসর্বস্ব নামে একটা বই লিখেছিলেন। অভিধানপ্রণেতা সর্বানন্দ এবং গণিতজ্ঞ এবং জ্যোতির্বিদ শ্রীনিবাস ছিলেন সেন যুগের আরো দুজন লেখক।

সাহিত্য হলো সমাজের আয়না। একদিকে রাজা লক্ষ্মণসেনের রাজসভার কবিদের সংস্কৃত ভাষায় লেখা কাব্যে ধনী ও বিলাসী জীবনের ছবি ফুটে উঠেছিল। রাজা লক্ষ্মণসেনকে কৃষ্ণের সঙ্গে তুলনা করে কবিরা স্তুতি করেছেন। আবার, গ্রামের সম্পন্ন কৃষকের জীবনযাত্রার ছবি ফুটেছে এই রকম একটি রচনায়: বর্ষার জল পেয়ে চমৎকার ধান গজিয়েছে, গোরুগুলো ঘরে ফিরে এসেছে, খেতে ভালো আখ হয়েছে, আর কোনো ভাবনা নেই।

অন্যদিকে, গরিব মানুষের জীবনেরও ছায়া পড়েছে সমসাময়িক সাহিত্যে। খিদেয় কাতর শিশু, গরিব লোকের ভাঙা কলসি, ছেঁড়া কাপড় এই সব দৃশ্য ব্যবহার করেছেন কবিরা। বৃষ্টিবহুল বাংলাদেশের কুঁড়েঘরের বাসিন্দা গরিব মানুষের জীবনের কষ্ট ধরা পড়েছে এই রকম একটি লেখায় কাঠের খুঁটি নড়ছে, মাটির দেওয়াল গলে পড়ছে, চালের খড় উড়ে যাচ্ছে, কেঁচো খুঁজতে আসা ব্যাঙে আমার ভাঙা ঘর ভরে গেছে। চর্যাপদের একটি কবিতায় আছে- ‘হাঁড়িতে ভাত নেই, নিত্য উপবাস’। এটাই চরম দারিদ্র্যের নিদর্শন।

Login / Register

(x)
Activation


(x)
Update password

(x)
Enter password


(x)
Optimized by Optimole