পালযুগ বাংলা ভাষার উৎপত্তির সময়কাল। আনুমানিক ৮০০-১১০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মাগধী অপভ্রংশ ভাষার গৌড়-বঙ্গীয় রূপ থেকে ধীরে ধীরে প্রাচীন বাংলা ভাষার জন্ম হয়। সেটাই ছিল সাধারণ, নিরক্ষর লোকের ভাষা।
সাহিত্য, ব্যাকরণ, ধর্ম, দর্শন, চিকিৎসাশাস্ত্র তখনও প্রধানত সংস্কৃত ভাষাতেই লেখা হত। ঐ ভাষা শিক্ষিত, পণ্ডিত এবং সমাজের উঁচু তলার মানুষের মধ্যে প্রচলিত ছিল। যেমন, সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত কাব্য বা চক্রপাণিদত্তের চিকিৎসা-বিজ্ঞানের বইগুলো সংস্কৃত ভাষাতে লেখা।
কবি সন্ধ্যাকর নন্দী পালরাজ রামপালের ছেলে মদনপালের শাসনকালে (আনুমানিক ১১৪৩-‘৬১খ্রিঃ) রামচরিত কাব্য লিখেছিলেন। রামচরিতের কাহিনি রামায়ণের গল্প অনুসারে লেখা হয়েছে। এতে কবি একই কথার দু-রকম মানে করেছেন। তিনি একদিকে রামায়ণের রাম এবং অন্যদিকে পালরাজা রামপালের কথা লিখেছেন।রামায়ণের আদলে লেখা হলেও এই কাব্য শুধুই বাল্মীকি রামায়ণের পুনরাবৃত্তি নয়। এই কাব্যে খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকের বাংলার প্রেক্ষাপটে এক ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক আদর্শ প্রচার করা হয়েছে। একই সঙ্গে রাম এবং রামপালের গল্প লিখতে গিয়ে রামচরিতের ভাষা জটিল হয়ে পড়েছে। এর ভাষা ছিল সংস্কৃত। এই কাব্য পণ্ডিত ও শিক্ষিত মানুষদের জন্যই লেখা হয়েছিল সাধারণ মানুষের এই কাব্য পড়ার সামর্থ্য ছিল না।