আঞ্চলিক রাজশক্তিগুলির বাড়-বাড়ন্তের ছাপ সে সময়ের ভারতীয় সমাজ এবং অর্থনীতিতে পড়েছিল। সমাজে এক বিশেষ গোষ্ঠীর ক্ষমতা বেড়ে যায়। সমকালীন লেখকরা সামন্ত, রাজ, রৌণক-এসব নামে ঐ গোষ্ঠীর পরিচয় দিয়েছেন। এদের মধ্যে কিছু ছিল উঁচু রাজকর্মচারী। তাদের নগদ বেতন না দিয়ে অনেক সময়ে জমি দেওয়া হতো। সেই জমির রাজস্বই ছিল ঐ কর্মচারীদের আয়।
আবার কিছু অঞ্চলে যুদ্ধে হেরে যাওয়া রাজারাও সেই অঞ্চলের রাজস্ব ভোগ করত। কখনওবা যুদ্ধপটু উপজাতি নেতারা কোনো কোনো অঞ্চলে কর্তৃত্ব করত।
এই গোষ্ঠীগুলির এক জায়গায় মিল ছিল। এরা কেউই পরিশ্রম করে উৎপাদন করত না। অন্যের শ্রমে উৎপন্ন দ্রব্য বা রাজস্ব থেকে নিজেরা জীবিকা চালাত। এই অন্যের শ্রমভোগী গোষ্ঠীর মধ্যেও স্তরভাগ ছিল। কেউ ছিল একটি গ্রামের প্রধান। কেউ বা কয়েকটি গ্রাম মিলিয়ে একটা অঞ্চলের দখল রাখত। একটি বিরাট অঞ্চলের উপরেও কর্তৃত্ব ছিল কারো কারো। এভাবেই রাজা, গোষ্ঠীর শাসক এবং জনগণকে নিয়ে একটি স্তরভেদ তৈরি হয়েছিল সমাজে। মহাসামন্ত, সামন্তদের মধ্যে সবসময়েই যুদ্ধ-ঝগড়া চলত। সবাই চাইত নিজের ক্ষমতা আরও খানিক বাড়িয়ে নিতে। কখনোবা এরা জোট বেঁধে রাজার বিরুদ্ধেও যুদ্ধে নামত। একসময়ে দখল করা গ্রাম থেকে রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি, গ্রামের শাসন এবং বিচারও করত এই গোষ্ঠী। রাজার ক্ষমতাকেও এরা অনেক সময়ে অস্বীকার করত। এর ফলে রাজশক্তির দুর্বলতা পরিষ্কার হয়ে যায়। সামন্ত নেতাদের দাপটে গ্রামগুলির স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থাও নষ্ট হয়