ভারত এবং বহির্ভারতের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার অন্যতম উদাহরণ হলেন দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান (অতীশ)। বাঙালি বৌদ্ধ আচার্যদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত এবং শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত অতীশের (আনুমানিক ৯৮০-১০৫৩ খ্রিঃ) জন্ম বঙ্গাল অঞ্চলের বিক্রমণিপুরের বজ্রযোগিনী গ্রামে। তিনি ব্রাহ্মণ্য মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না বলে তাঁর বাড়ি আজও ‘নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা’ নামে পরিচিত। ওদন্তপুরী বিহারে আচার্য শীলরক্ষিতের কাছে দীক্ষা নিয়ে তিনি দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান নামে পরিচিত হন। তিনি সম্ভবত বিক্রমশীল, ওদন্তপুরী এবং সোমপুরী মহাবিহারের আচার্য ও অধ্যক্ষ ছিলেন। তিব্বতের রাজা জ্ঞানপ্রভের অনুরোধে তিনি দুর্গম হিমালয় অতিক্রম করে তিব্বতে যান (১০৪০ খ্রিস্টাব্দ)। সেখানে তিনি মহাযান বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন। তাঁরই চেষ্টায় তিব্বতে বৌদ্ধধর্ম জনপ্রিয় হয়। তিনি অনেক সংস্কৃত গ্রন্থ ভোট ভাষায় অনুবাদ করেন। তাঁর মূল সংস্কৃত লেখাগুলি না পাওয়া গেলেও তিব্বতি ভাষায় অনুবাদগুলি পাওয়া যায়। অতীশ তিব্বতে বুদ্ধের অবতার হিসাবে পূজিত হন।
তিব্বতের রাজধানী লাসার কাছে তাঁর সমাধিস্থান পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। সমগ্র বাংলা-বিহারের ওপর তাঁর গভীর প্রভাব ছিল। তাই এদেশের বৌদ্ধ আচার্যরা মনে করেছিলেন যে তিনি তিব্বতে চলে গেলে ভারতবর্ষ অন্ধকার হয়ে যাবে। অনেক পরে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এই অসীম প্রতিভাধর আচার্য সম্পর্কে লিখেছেন ‘বাঙালি অতীশ লঙ্ঘিল গিরি তুষারে ভয়ংকর, জ্বালিল জ্ঞানের দীপ তিব্বতে বাঙালি দীপঙ্কর’।